Thursday, August 4, 2016

আল্ট্রাসনোগ্রাফি কি এবং কেন? আল্ট্রাসনোগ্রাফির উপকারিতা ও অপকারিতা


Ultrasonography
প্রথম আলো টোয়েন্টিফোর.কম

আল্ট্রাসনোগ্রামের কথা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে মনিটরের পর্দায় গর্ভবতী মায়ের অনাগত বাচ্চার ছবি ভেসে উঠে। আল্ট্রাসনোগ্রাফিকে সনোগ্রাফিও বলা হয়। সনোগ্রাফির মাধ্যমে চিকিৎসক স্ক্রিনের ছবি বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয় করে থাকেন। আল্ট্রাসনোগ্রাফি মূলত গর্ভকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারি পরীক্ষা। তথাপি আল্ট্রাসনোগ্রামের আরো অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যবহার রয়েছে যা আমাদের অজানা।
আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহারঃ

১। গর্ভাবস্থাঃ সনোগ্রাফির মাধ্যমে বাচ্চা ডেলিভারি তারিখ থেকে শুরু করে বাচ্চার গঠন-প্রকৃতি, লিঙ্গ, মায়ের সম্ভাব্য কোন অসংগতি যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর, মায়ের পেটের ভিতর বাচ্চার অবস্থান, বাচ্চার নড়াচড়া, জমজ বাচ্চা-সহ বিভিন্ন বিষয় জানা যায়। গর্ভকালীন যেকোন ইমার্জেন্সিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি একজন চিকিৎসকের জন্য সর্বোত্তম নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি পরীক্ষা পদ্ধতি। আল্ট্রাসনোগ্রাফির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য রেডিওলোজীকাল পরীক্ষার তুলনায় কম বলে এটা বেশ নিরাপদ।

২। রোগ নির্ণয়ঃ সনোগ্রাফির মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন লিভার, স্প্লিন বা প্লিহা, কিডনি, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, পিত্তথলি, চক্ষু, থাইরয়েড, মূত্রথলীসহ নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের নানাবিধ রোগ সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব।

৩। বায়োপসি ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যেঃ বায়োপসি ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সনোগ্রাফি ব্যবহার করা যায়। যেমন শরীরের কোন অঙ্গের পাথর নিরাময়ের জন্যও সনোগ্রাফি বহুল ব্যবহৃত হয়।
৪। রক্তনালীর গতিপথ ও প্রবাহ নির্ণয়ঃ বর্তমানে সনোগ্রাফির আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হল রক্তনালীর গতিপথ ও প্রবাহ নির্ণয় করা। এতে করে আমাদের রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থার রোগও ডায়াগনোসিস করা সম্ভব।
৫। ইকোকার্ডিওগ্রামঃ হৃৎপিন্ডের গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য যে ইকো করা হয় তা মূলত সনোগ্রাফিরই অন্য আরেকটি ব্যবহার।
আল্ট্রাসনোগ্রাফির উপকারিতাঃ১. এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যানে ক্ষতিকর আয়োনাইজিং তরঙ্গ ব্যবহৃত হয় যা বিকিরণ নি:সরণ করে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। সনোগ্রাফি এক্ষেত্রে খুবই নিরাপদ। এতে কেবল শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এর কোন ক্ষতিকর বিকিরণজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।

২. সনোগ্রাফি ব্যথামুক্ত এবং কোন ধরনের ইঞ্জেকশান বা কাঁটা ছেড়া মুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি। ফলে এটা রোগীর জন্য স্বস্তিদায়ক এবং চিকিৎসকের জন্য সহজগম্য।

৩. শরীরের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যান অপেক্ষা সনোগ্রাফি বেশি নির্ভরযোগ্য।
৪. সনোগ্রাফি রোগীর জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী।

আল্ট্রাসনোগ্রাফির অপকারিতাঃ
যুগের উন্নতির সাথে সাথে টেকনোলজি অনেক অগ্রসরমান হওয়ায় সনোগ্রাফির জগতেও অনেক উদ্ভাবন ঘটেছে। এখন খুব সহজেই 4D ব্যবহার করে বাচ্চার মুখাবয়ব পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেকনোলোজির ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তাই বাচ্চা ও মা সুস্থ থাকলে শুধুমাত্র ফ্যান্টাসি বা বিনোদন হিসেবে 4D ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে 4D তে অনেক বেশি উচ্চ কম্পাংকের শব্দ তরংগ ব্যবহৃত হয়, যাতে মায়ের পেটের ভিতরে অবস্থানরত বাচ্চার অতি সংবেদনশীল টিস্যুর ক্ষতিসাধন হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সনোগ্রাফির সময় এ ব্যাপারে চিকিৎসক ও রোগী উভয়েরই সচেতন থাকা জরুরী।

আল্ট্রাসনোগ্রাফির জন্য প্রস্তুতিঃ
১। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে কখনও ভরা পেট কিংবা খালি পেট, কখনও পূর্ণ মূত্রথলি কিংবা শূন্য মূত্রথলি এবং প্রয়োজন ভেদে সারারাত খালি পেটেও সনোগ্রাফি প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য পরীক্ষার পূর্বে চিকিৎসকের দিক নির্দেশনা রোগীকে অবহিত করতে হবে।

২। পোশাকঃ সনোগ্রাফির জন্য আরামাদায়ক সুতি পোশাক পরিধান করা উত্তম।

৩। সময়ঃ সাধারনত একটি সনোগ্রাফি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা সময় লাগতে পারে। এটি নির্ভর রোগীর রোগের অবস্থা ও চিকিতসকের দক্ষতাভেদে বিভিন্ন সময় পার্থক্য হতে পারে।

লেখক: ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা, এম.ফিল (ইন কোর্স), নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড এলাইড সাইন্সেস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Share:

AD

Popular Posts

আগামীকালের ইফতার সময়

AD

Blog Archive

Definition List

Support

আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে

Name

Email *

Message *

বিজ্ঞাপন