প্রথম আলো টোয়েন্টিফোর.কম ডেক্স:
ঢাকা: সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাংক হিসাবে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে বিএনপির তোলা দাবিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘অসত্য’ বললেও সে বিষয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে দলটির স্থায়ী কমিটি।
শুক্রবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবির কথা জানান।
তিনি বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পেশকৃত অভিযোগপত্রে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্ত বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাংকের রক্ষিত ৩০০ মিলিয়ন ডলারের যে উল্লেখ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে সরকার নিরব রয়েছে।
“এই পরিমাণ রক্ষিত অর্থ সম্পর্কে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত বিষয় জাতির সামনে প্রকাশের দাবি জানানো হচ্ছে।”
জয়ের বিষয়ে তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের কারাদণ্ডের রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রীপুত্রের নামে ৩০ কোটি ডলার থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি করে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের নেতারা।
এর প্রতিক্রিয়া এর মধ্যে জয় ফেইসবুকে খালেদার উদ্দেশ্যে লিখেছেন, “ম্যাডাম, আপনি যদি জানেন যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কোথায়, অনুগ্রহ করে আমাকে জানান। আমি সেই সমস্ত অর্থ এতিমদের দান করে দিতে চাই।”
ছেলের পক্ষে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাও সংসদে বলেছেন, “কয়েকদিন আগে বিএনপিনেত্রী জয় সম্পর্কে একটি অসত্য তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন। জয় সেটা চ্যালেঞ্জ করেছে। আমি আশা করি, সেই চ্যালেঞ্জের জবাব তিনি দেবেন এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়কে কেন্দ্র করেই ঢাকায় পুলিশ গত বছর জয়কে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়, যাতে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বিএনপি ঘনিষ্ঠ সম্পাদককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি করেন ফখরুল।
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পেশকৃত অভিযোগে সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের নাম উল্লেখ নেই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির গত বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা এই সংবাদ সম্মেলনে দলকে নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
“গত কয়েকদিন যাবত দেশের কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক চ্যানেলে বিএনপির ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন এবং সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিভাবে। বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই প্রচারণা চালাচ্ছে বলে জাতীয় স্থায়ী কমিটি করে।”
এধরনের প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় প্রায় ৬০ জনের প্রাণহানির তথ্য দিয়ে এটাকে ‘প্রহসন ও তামাশার নির্বাচন’ আখ্যায়িত করেন বিএনপির মহাসচিব।
“সভায় অবিলম্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানানো হয়।”
তার সঙ্গে ‘দেশে চলমান সঙ্কট উত্তরণে’ একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছেন বলে তিনি জানান।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বিশেষ করে বিদেশি ও ভিন্নমত পোষণকারীদের হত্যার কয়েকটি ঘটনা এবং সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ ও তাদের সম্পদ দখলের ঘটনা ঘটেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
“বিরোধী দলকে দোষারোপ না করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সেইসঙ্গে জঙ্গি দমনে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সংলাপে বসারও আহ্বান জানান তিনি। যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ফাঁসির প্রতিক্রিয়া
যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা তুরস্কের সিদ্ধান্ত, সুতরাং তারা জবাব দেবে।
“আর যুদ্ধাপরাধীর বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান বার বার পরিষ্কার করেছি। আমরা সবসময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। কিন্তু সেই বিচার হতে হবে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যতীত, স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার; দ্যাটস অল।”
নির্বাহী কমিটির বাকিটা শিগগির।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা কমিটি ইতিমধ্যে পেয়েছেন। বাকিটা যথাসময়ে শিগগিরই পাবেন।”
১৯ মার্চ ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটউশন প্রাঙ্গণে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এরপর দলটি তিন দফায় মহাসচিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ও কোষাধ্যক্ষসহ ৪০ পদে নাম ঘোষণা করে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জ্যেষ্ঠ নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম