Thursday, May 26, 2016

পা দিয়ে স্ত্রীর গর্ভপাত

প্রথম আলো টোয়েন্টিফোর.কম  ডেক্স

ঢাকা:
দাবিকৃত যৌতুকের টাকা পরিশোধ না করায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল গ্রামে এক অন্তঃসত্বা গৃহবধূর ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে তাকে মাটিতে ফেলে তলপেটে আঘাত করে এবং পা দিয়ে পাড়িয়ে গর্ভপাত ঘটায়।

নির্যাতনে গর্ভপাত ও অসুস্থ গৃহবধূর রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসা না দিয়ে তাকে ঘরের মধ্যে ৭ দিন আটকে রাখেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে স্থানীয়রা মূমূর্ষ গৃহবধূকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে বুধবার তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় স্বামী ও শ্বশুরকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

নির্যাতিত গৃহবধূ, স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের মুলাদী উপজেলার রামারপোল গ্রামের মৃত সেকেন্দার হাওলাদারের মেয়ে সেলিনা বেগমের (২৫) সঙ্গে গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের বোরাদী গরঙ্গল গ্রামের মো. দুলাল খানের ছেলে আনোয়ার খানের (৩০) দেড় বছর পূর্বে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বামী আনোয়ার খানকে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও স্বর্ণালংকারসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল দিয়ে দেন।

গৃহবধূ সেলিনা বেগম জানান, বিয়ের ৮ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে স্বামী আনোয়ার খান বিদেশ যাওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে ৭০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করলে সে বাবার বাড়ি থেকে তা এনে দেন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার পরে গত নভেম্বর মাসে তার শ্বশুর দুলাল খান নতুন করে ৫০ হাজার টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। টাকা আনতে অস্বীকার করলে শ্বশুর দুলাল খান তাকে বেদম মারধর করে। বিষয়টি ফোনে স্বামী আনোয়ার খানকে জানিয়ে বাড়িতে আসতে বললে স্বামী গত জানুয়ারি মাসে বাড়িতে ফিরে আসেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি বর্তমানে ৪ মাসের অন্তঃসত্বা। কিছুদিন আগে আমার স্বামী তার বাবার কু-পরামর্শে আমাকে বলেন, তুই যদি বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে না দিস তাহলে তোর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিব। আমি বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করলে স্বামী ও শ্বশুর মিলে আমাকে বিভিন্ন সময় লাঠিপেটা করে।

সেলিনার বড় বোন লিলি বেগম (৩০) জানান, বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা আনতে অস্বীকার করায় গত ১৭ মে স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খান সেলিনাকে বেদম মারধর করে রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। একপর্যায়ে তাকে মাটিতে ফেলে তলপেটে আঘাত করে এবং পা দিয়ে পাড়িয়ে গর্ভপাত ঘটায়। এতে সেলিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় ৭ দিন ঘরের মধ্যে আটকে রাখে।

নলচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সহিদ খান জানান, তিনি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়দের নিয়ে মঙ্গলবার রাতে সেলিনাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর মহিউদ্দিন বলেন, প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া আঘাতজনিত কারণে রোগীর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। যে কারণে বুধবার তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গৃহবধূর স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল গা ঢাকা দিয়েছেন।

এ ঘটনায় সেলিনা বেগম বাদী হয়ে স্বামী আনোয়ার খান ও শ্বশুর দুলাল খানকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।

গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন মিলন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তথ্যসূত্র: নতুনসময়.কম
Share:

0 comments:

Post a Comment

AD

Popular Posts

আগামীকালের ইফতার সময়

AD

Blog Archive

Definition List

Support

আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে

Name

Email *

Message *

বিজ্ঞাপন