Wednesday, August 17, 2016

জঙ্গি মারজান ‘শিবিরের সাথী’

প্রথম আলো টোয়েন্টিফোর.কম ডেক্স

রাজধানীর গুলশান হামলার সন্দেহভাজন পরিকল্পনাকারী জেএমবি নেতা নুরুল ইসলাম মারজান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আরবি বিভাগের এ শিক্ষার্থী ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রাখেন। এরপর আর ভর্তি হননি তিনি।

এরমধ্যে গত নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে পুলিশি তল্লাশিতে উদ্ধার কয়েকটি ল্যাপটপ ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নথিপত্র যাচাই করে মারজানের সংগঠনটির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, পুলিশ ওই সব নথিপত্র যাচাই বাছাই করে বলেছিল, নুরুল ইসলাম ইসলামী ছাত্র শিবিরের ‘সাথী’।

মারজান গুলশানের ক্যাফেতে হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে গণমাধ্যমে সংবাদ আসার পর তার সনদ ও ছবি দেখে আরবি বিভাগের নুরুল ইসলাম হিসেবে শনাক্ত করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী জানান।

নজিরবিহীন এ হামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী এ হামলার হোতা। তিনি ‘নিও জেএমবি’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন।

গুলশান হামলার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নিখোঁজ ছাত্রদের তালিকা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিখোঁজ ছয় ছাত্রের তালিকা দেয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তাদের সবার খোঁজ পাওয়া যায়। তবে ওই তালিকায় ছিলেন না মারজান।

মারজানকে নিয়ে উপাচার্য বলেন, ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বর্ষের ষষ্ঠ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ নেই।
তৃতীয় বর্ষে পুনঃভর্তি না হওয়ায় নুরুল ইসলাম আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।

পাবনার হেমায়েতপুরের আফুরিয়া গ্রামের হোসিয়ারি শ্রমিক নিজাম উদ্দিনের ছেলে মারজান পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছিলেন।

এরপর পাবনা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।

এরমধ্যে মারজান বিয়ে করেন জানিয়ে তার পরিবার বলছে, গত আট মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না তাদের।

মারজান ছাড়াও বগুড়ায় বোমা বানামোর সময় বিস্ফোরণে নিহত জেএমবি নেতা ফারদীনের সহযোগী হিসেবে গত ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম নগরী থেকে গ্রেপ্তার চবির তিন শিক্ষার্থীর একজন নাইমুর রহমান নয়নও (২৫) ইসলামী ছাত্র শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ।-বিডিনিউজ।

গত জুনে মাদারীপুরে এক কলেজ শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার সময় জনতার হাতে আটকের পর পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিমও ছাত্র শিবিরের কর্মী ছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সম্পৃক্ততার কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও।

গত রোববার গাইবান্ধায় জঙ্গিবাদবিরোধী এক সভায় তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরে যারা রগ কাটত, তারাই এখন নিজেদের আইএস বলছে।

গুলশান হত্যাকাণ্ডসহ গত দুই বছরে বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে। তবে বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব নাকচ করে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মারজানের বিভাগ আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের গ্রন্থাগার থেকে বিপুল পরিমাণ ‘ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টিকারী’ বই ও প্রচারপত্র জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ।

প্রক্টর আলী আজগর বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিভাগ থেকে ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টিকারী বই জব্দ শুরু করেছি।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরি, মসজিদ লাইব্রেরি ও হল লাইব্রেরিগুলোতে অনেক বই আছে, যেগুলো কোনো অ্যাকাডেমিক কাজে লাগে না বরং ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। সাতদিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্থান থেকে এসব বই তুলে নেওয়া হবে।”

রোববার আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে উদ্ধার বইগুলোর মধ্যে জামায়াতের তাত্ত্বিক গুরু আবুল আলা মওদুদী, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও বিতর্কিত ভারতীয় বক্তা জাকির নায়েকসহ বিভিন্ন লেখকের দুই শতাধিক বই রয়েছে বলে সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বিভাগকে তাদের গ্রন্থাগোরে সংরক্ষিত বইয়ের তালিকা দিতে বলেছিল। এর প্রেক্ষাপটে বিভাগগুলো যে তালিকা দিয়েছিল তাতে এসব বই নেই।

“আরবি বিভাগ থেকে বেশ কিছু লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলো ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী।’’

এ বিষয়ে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান ইসমাইল চৌধুরী বলেন, “বিভাগে কিছু লিফলেট আমার আগের চেয়ারম্যান হজ থেকে আসার সময় এনেছিলেন। আর কিছু লিফলেট কীভাবে এখানে এলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

উপাচার্য জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের তালিকা চাইলে আরবি বিভাগ তা দেয়নি বলে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

তথ্য: সংগৃহীত
Share:

0 comments:

Post a Comment

AD

Popular Posts

আগামীকালের ইফতার সময়

AD

Blog Archive

Definition List

Support

আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে

Name

Email *

Message *

বিজ্ঞাপন