অঞ্জলি কুমারীর বয়স
মাত্র সাত
বছর। তার
ভাই কেশব
কুমারের বয়স
১৮ মাস।
কিন্তু তাদের
দেখে কেউ
তাদের শিশু
বলে ঠাহর
করতে পারবেন
না। তাদেরকে
দেখতে বৃদ্ধ
মানুষের মতো।
গায়ের চামড়া
ঝুলে পড়েছে
বুড়ো মানুষের
মতো। মুখের
চামড়া, চেহারায়
পড়েছে বার্ধক্যের
ছাপ। কেন
এমন হচ্ছে
এর কোনো
উত্তর নেই
তাদের কাছে,
তাদের অভিভাবকদের
কাছে। তবে
চিকিৎসকরাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ
রোগের কোনো
চিকিৎসা নেই।

ফলে শৈশবেই
তাদের বৃদ্ধদের
মতো দিনকাল
কাটাতে হবে।
তাদের সমবয়সীরা
তাদেরকে দাদিমা
বা দাদা
বলে ডাকে।
এতে ভীষণ
কষ্ট হয়
অঞ্জলি ও
কেশবের। হলিউডে
‘বেঞ্জামিন বাটন’ ছবিতে ব্রাড পিটকে
এমনভাবে তুলে
ধরা হয়েছিল।
ঠিক তার
মতো দেখতে
হয়েছে ওরা
দুজন। ‘দ্য
কিউরিয়াস কেস
অব বেঞ্জামিন
বাটন’-এ
ব্রাড পিট
জন্মগ্রহণ করেছিলেন একজন বৃদ্ধ হিসেবে।
তারপর তিনি
বয়সের স্বাভাবিক
নিয়মের উল্টো
দিকে যেতে থাকেন।
অর্থাৎ সময়ের
সঙ্গে সঙ্গে
তিনি শৈশবের
বয়স, মুখাবয়ব
ফিরে পেতে
থাকেন। অঞ্জলি
ও কেশবের
বাড়ি ভারতের
ঝাড়খণ্ড রাজ্যের
রাচিতে।
এ
অবস্থার জন্য
তারা তো
দায়ী নয়!
তবু রাস্তায়
বেরুলে তাদেরকে
নিয়ে ঠাট্টা
করে মানুষ।
তারা কারো
সঙ্গে মিশতে
পারে না।
অন্য শিশুরা
যখন খেলায়
মত্ত তখন
তারা থাকে
ঘরের কোণে
বন্দি। কারণ,
তারা খেলতে
গেলেই তাদের
তিরস্কার করা
হবে। অঞ্জলি
বলেছে, জানি
আমার সমবয়সীদের
তুলনায় আমি
দেখতে অনেকটা
অন্য রকম।
আমার অন্য
রকম মুখমণ্ডল।
শরীরের ত্বকের
গঠন ভিন্ন।
দেখতে দাদি,
নানিদের মতো।
সারা বিশ্বের
শিশুদের দেখতে
যেখানে স্বাভাবিক,
তখন আমাদের
দেখলে মানুষ
হাসে।
সব
সময় তারা
আমাদের দিকে
তাকিয়ে থাকে।
খারাপ খারাপ
কথা বলে।
স্কুলের সহপাঠীরা
আমাকে দাদিমা,
বৃদ্ধা, বান্দর,
হনুমান বলে
ডাকে। এতে
আমার খুব
রাগ হয়।
অন্য শিশুরা
যেমন স্বাভাবিক
ব্যবহার পায়
অন্যদের থেকে
আমিও তাই
চাই। আমারও
ইচ্ছে করে
আমাকে আমার
বোনের মতো
সুন্দরী দেখাতে।
পিতামাতা বলেন,
একদিন আমি
ভাল হয়ে
যাবো। আমার
জন্য আমার
পরিবার দুর্ভোগ
পোহাচ্ছে, বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে
এটা বুঝতে
পেরে আমার
খুব মন
খারাপ হয়ে
যায়। অঞ্জলি
ও কেশব
যে রোগে
ভুগছে তার
নাম কিউটিস
লাক্সা। এটা
জিনগত সমস্যা
থেকে হয়।
অঞ্জলি ও
কেশবের পিতা
শত্রুঘন রাজাক
(৪০)।
মা রিঙ্কি
দেবী (৩৫)। অঞ্জলির
বড় বোনের
নাম শিল্পী
(১১)।
সে সুস্থ
আছে। তার
মধ্যে এ
রোগের কোনো
লক্ষণ নেই।
তার পিতা
শত্রুঘন একজন
লন্ড্রিম্যান। মাসে তার আয় মাত্র
সাড়ে চার
হাজার রুপি।
তিনি বলেন,
আমরা স্বপ্ন
দেখি একদিন
আমাদের সন্তানরা
সুস্থ হয়ে
উঠবে। সমাজের
সবাই আমার
এ দু’সন্তানকে দেখেই
বুড়ো বলে
সম্বোধন করে।
এতে আমার
হৃদয় ভেঙে
যায়।
স্থানীয়
চিকিৎসকদের কাছে এ রোগের প্রতিকার
পাওয়ার চেষ্টা
করেছি। তারা
বলেছেন, এ
রোগের একমাত্র
চিকিৎসা হতে
পারে বিদেশে।
রিঙ্কি যখন
প্রথম সন্তান
শিল্পীর মা
হলেন তখন
তারা সংসার
গড়ে তোলায়
মন দিলেন।
কিন্তু অঞ্জলির
বয়স যখন
মাত্র ছয়
মাস তখন
তারা তাকে
একটি হাসপাতালে
নিয়ে যান।
এ সময়ে
অঞ্জলি নিউমোনিয়ায়
আক্রান্ত হয়েছিল।
নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হওয়ার পর
তার ত্বক
শুকিয়ে যেতে
থাকে। গায়ের
চামড়া ঢিলে
হতে থাকে।
শিশুদের এমন
রোগকে হাচিনসন-গিলফোর্ড প্রোগেরিয়া
সিনড্রোম (এইচপিএস) নামেও অভিহিত করা
হয়। চিকিৎসকরা
বলছেন, জেনেটিক
বিশৃঙ্খলতার জন্য এমন হয়ে থাকে।
একটি শিশু
দ্রুততার সঙ্গে
বৃদ্ধের মতো
শারীরিক গঠন
লাভ করে।
বিশ্বজুড়ে প্রতি ৪০ লাখ শিশুর
মধ্যে এমন
রোগ দেখা
যায় একজনের
দেহে। এসব
শিশু স্বাধারণত
১৩ বছরের
বেশি বাঁচে
না।
চিকিৎসকদের
মতে, একটি
বিশেষ জিনের
একটি এলোমেলো
বিন্যাস বা
কর্মকাণ্ডের জন্য শরীরে প্রোটিনের সরবরাহ
অস্বাভাবিক হয়। এই প্রোটিনকে বলা
হয় প্রোগেরিন।
খুব সহজে
তা ভেঙে
যেতে থাকে।
তাই জন্মের
সময় সুস্থভাবে
জন্ম নিলেও
এমন জিনগত
ত্রুটির কারণে
প্রথম বছরের
মধ্যেই ওইসব
শিশুর দেহে
পরিবর্তন লক্ষ্য
করা যায়।
প্রথমে যেসব
সমস্যা প্রতীয়মান
হয় তার
মধ্যে রয়েছে-
মাথার আকার
বিশাল দেখায়।
চোখও অনেক
বড় বড়
দেখায়।
নিচের
চোয়াল ছোট
দেখায়। নাক
কিছুটা ঝুলে
পড়ে। কান
খাড়া হয়ে
যায়। শিরা-উপশিরা দৃশ্যমান
হয়। দাঁতের
বৃদ্ধি খুব
ধীর গতিতে
হয়। চুল
পড়ে যেতে
থাকে। অঞ্জলির
পিতা বলেন,
আমরা একটি
হাসপাতালে নিয়ে যাই তাকে। তারা
সাফ সাফ
বলে দিয়েছে
এ রোগের
কোনো চিকিৎসা
নেই। অঞ্জলির
জীবন এক
সৃষ্টিকর্তার হাতে। চিকিৎসকরা তাকে আরও
বলে দেন,
যদি তারা
এর কোনো
চিকিৎসা সম্পর্কে
জানতে পারেন
তাহলে তাদেরকে
জানাবেন। কিন্তু
তারা আর
যোগাযোগ করেননি।
ওদিকে অঞ্জলি
দ্রুততার সঙ্গে
বৃদ্ধ থেকে
বৃদ্ধ হয়ে
যাচ্ছে। অঞ্জলি
জন্ম নেয়ার
৫ বছর
পর শত্রুঘন
ও রিঙ্কি
সিদ্ধান্ত নেন আরেকটি সন্তান নেবেন
তারা। নিলেনও।
তার নাম
রাখলেন কেশব।
প্রথম থেকেই
তারা লক্ষ্য
করলেন অঞ্জলির
মধ্যে যে
সমস্যা দেখা
দিয়েছে কেশবের
মধ্যেও তা
বিদ্যমান। শত্রুঘন বলেন, আমরা কেশবকে
চিকিৎসকের কাছে নিই নি। কারণ,
এ রোগের
তো কোনো
চিকিৎসা নেই।
আমার পরিবার
গরিব। বারবার
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সক্ষমতা আমার
নেই। তারা
তো অঞ্জলির
জন্যই কিছু
করতে পারলো
না। তাহলে
কেশবের কী
করবে? মা
রিঙ্কি বলেন,
অঞ্জলির গা
হাত পা
সারাক্ষণ ব্যথা
করে। তাই
সব সময়ই
তার পা
ম্যাসাজ করে
দিতে হয়।
নিজের সন্তানের
এ অবস্থা
দেখে আমার
বুক ভেঙে
যায়। অঞ্জলি
জানতে চায়,
কবে সে
তার বোনের
মতো সুস্থ
হবে। এ
যাবৎ অঞ্জলি
ও কেশবকে
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করিয়েছেন শত্রুঘন। তাতে
তার মাসে
খরচ হয়েছে
৫০০ রুপি।
কিন্তু তাতে
কোনো ফল
আসছে না।
কেউ যদি
আমাদের সাহায্যে
এগিয়ে আসতো!
আমি বড়
অসহায় হয়ে
পড়েছি। যখন
দেখি সন্তানের
কোনো উপকারে
আসতে পারছি
না তখন
ভীষণ কষ্ট
লাগে। আমার
সামনে তাদের
বুড়ো হয়ে
যেতে দেখছি।
আর আমি
কিছুই করতে
পারছি না।
আমি সৃষ্টিকর্তার
কাছে প্রার্থনা
করি তিনি
যেন অলৌকিক
কিছু একটা
ঘটিয়ে দেন।
সূত্র: মানবজমিন
0 comments:
Post a Comment